পোশাক শ্রমিকদের পরিবার পরিকল্পনায় সানেম এবং এমএফও’র জরিপ
প্রকাশিত : ১৮:৪০, ১৯ নভেম্বর ২০২০
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকেই সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ম্যাইক্রোফ্যাইনান্স অপরচুনিটিজ পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। “গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ” প্রকল্পের পোশাক শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহের জরিপে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়।
সম্প্রতি এই প্রকল্পের নারী পোশাক শ্রমিকদের পরিবার পরিকল্পনা এবং মাসিককালীন স্বাস্থ্যবিধির ওপর কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হয়। উত্তরদাতারা যাতে প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে স্বস্তিবোধ করেন এজন্য নারী তথ্য সংগ্রাহকগণ তাদের নিকট থেকে জরিপের উত্তরগুলি সংগ্রহ করেন।
এখানে যে তথ্যগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে তা ৮৮৬ জন নারী পোশাক শ্রমিকদের একটি ‘পুল’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮৭৫ জনই জানিয়েছেন তারা এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে অস্বস্তি বোধ করছেন না। এ শ্রমিকরা বাংলাদেশের প্রধান পাঁচটি শিল্পাঞ্চলে ( ঢাকা সিটি, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম) কর্মরত আছেন। এ বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জরিপটি পরিচালিত হয়।
পরিবার পরিকল্পনা
যেসব নারী পোশাক শ্রমিকদের জন্য পরিবার পরিকল্পনার বিষয়টি প্রযোজ্য (যারা বিবাহিত, প্রজনন ক্ষমতার বয়সে রয়েছেন এবং যারা সন্তান জন্মদানে সমর্থ), তাদের মধ্যে থেকে ৭১ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন তারা পরিবার পরিকল্পনার বিধি মেনে চলছেন। যারা পরিবার পরিকল্পনার বিধি পালন করছেন তাদের মধ্যেঃ
• ৫২ শতাংশ জন্মনিরোধক পিল বা বড়ি ব্যবহার করছেন
• ৩০ শতাংশ জন্মনিরোধক ইনজেকশন ব্যবহার করছেন
• ৯ শতাংশ নারী শ্রমিকের স্বামী কনডম ব্যবহার করছেন
• ৭ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন তারা “চিরাচরিত পদ্ধতি” যেমন ওয়িথড্রয়াল পদ্ধতি, ক্যালেন্ডার পদ্ধতি ইত্যাদি ব্যবহার করছেন।
• অন্যান্য পদ্ধতি যেমন আইইউডি’র ব্যবহার, স্থায়ী সার্জারি বা ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতিগুলির প্রত্যেকটি ১ শতাংশেরও কম পোশাক শ্রমিক ব্যবহার করছেন।
মাসিককালীন স্বাস্থ্যবিধি
জরিপে অংশগ্রহণকারী নারী পোশাক শ্রমিকগণ মাসিককালীন পরিচর্যায় কি ব্যবহার করেন তা নিচের ছকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য জরিপে অংশগ্রহণকারী পোশাক শ্রমিকদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
মাসিককালীন পরিচর্যা শতকরা ব্যবহার
পরিষ্কার কাপড় ৪৪%
স্যানিটারি প্যাড ৩৪%
মাসিক হচ্ছে না ৭%
জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার করার কারণে মাসিক হচ্ছে না ৫%
গার্মেন্টেসের কাপড় ৩%
কিছু ব্যবহার করছেন না ৩%
টয়লেট টিস্যু ২%
অন্যান্য ২%
তুলা ১%
উত্তর দিতে চান নি ০%
সানেম এবং এমএফও-র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই জরিপগুলো “গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ” শীর্ষক প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ ও উৎপাদক দেশগুলোতে নিয়োজিত শ্রমিকদের শ্রম ঘন্টা, আয়, ব্যয় এবং অন্যান্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিয়মিত, নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সরকারী নীতি, শ্রমিকদের দাবী-দাওয়া আদায় এবং কারখানা ও ব্রান্ডের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করা।
এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৬ সালে, আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ এর উদ্যোগে, বাংলাদেশ, ভারত ও কম্বোডিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যৌথভাবে। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচটি উৎপাদক দেশের শ্রমিকদের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা ও সেগুলো প্রকাশ করা। আশা করা হচ্ছে, এ তথ্য-উপাত্ত বৈশ্বিক সরবরাহ ধারায় স্বচ্ছতা নিয়ে আসবে।
আরকে//
আরও পড়ুন